প্রার্থিতা বাতিলের শঙ্কায় ঐক্যফ্রন্ট

যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে আদালতের আদেশে দু-একদিনের মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে- এমন গুঞ্জনে গতকাল দিনভর মুখর ছিল সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা। এ গুঞ্জনে জামায়াতের নেতাকর্মী-সমর্থক তো বটেই, কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্থানীয় বিএনপিরও খবর আমাদের সময়ের।

দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাদের গতকাল অনেকটাই হতাশাগ্রস্ত মনে হয়েছে, চোখে-মুখে মৌন প্রতিবাদের ছাপ স্পষ্ট। তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। আর এতে জামায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে। গ্রহণযোগ্যতা ম্লান হয়েছে সাতক্ষীরার মতো জেলাতেও। তারা বলছেন, এবার জামায়াতের প্রতি তাদের পরামর্শ ছিল ‘চুপ থেকে’ বিএনপিকে সমর্থন জোগানো। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে স্থানীয় জামায়াতের একগুঁয়ে মনোভাবের খেসারত দিতে হবে ঐক্যফ্রন্টকে।

এদিকে জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিল হলেও তাদের সমর্থনকারী ভোটাররা নিশ্চয় ভোট দেবেন। এ ভাবনা থেকে ভোট টানতে মাঠে তৎপর হয়েছেন অন্য প্রার্থীরা। মাঠপর্যায়ের সূত্রমতে, জামায়াতের ভোটারদের অভয় দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নেতারা। বার্তা পাঠাচ্ছেন ভোট দিলে দুর্দিনে তাদের আগলে রাখার। যদিও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দৃঢ়তার সঙ্গে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে আমাদের আপস তো দূরের কথা, যারা ঘোমটা দিয়ে এ অপকর্ম করবে, প্রমাণ পেলে দল কঠিন ব্যবস্থা নেবে।

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশের সঙ্গে গতকাল সকালে কথা হয় । সাতক্ষীরা সদর আসনে তিনি মনোনয়নও কিনেছিলেন। জামায়াত নেতারা নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হলে কী করবেন? এর জবাব না দিয়ে তিনি মৃদু হাসেন। বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না।

তবে আদালতের সিদ্ধান্ত যদি আমাদের শঙ্কার সঙ্গে মিলে যায়, সে ক্ষেত্রে ইসি চাইলে পুনরায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আমরা আদালতের সিদ্ধান্তের পর এমন দাবি করব। বিএনপি জেলা কমিটির একাধিক নেতা জানান, আমাদের আশঙ্কাই সত্যি হতে পারে। আমাদের দেওয়া পরামর্শমতো আজ জামায়াত সাতক্ষীরা জেলায় যদি প্রার্থী না দিত, তা হলে বিএনপির জয় ছিল সুনিশ্চিত। আর এর সুফল ভবিষ্যতে জামায়াতই পেত।

ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা জানান, দেশবাসী সাতক্ষীরাকে জামায়াতের ঘাঁটি বলে মনে করে। আমরা জানতাম, জামায়াতের কারণে সবার চোখ থাকবে এ আসনে। এও জানতাম, জামায়াত এখানে শক্ত অবস্থানে থাকলেও বিএনপি খারাপ অবস্থানে নেই। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, গোঁয়ার্তুমির পরিণাম কখনো ভালো হয় না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচনী আলোচনা শুরুর সময় জামায়াতের দাবি ছিল সাতক্ষীরার ৪টি আসনই সাতক্ষীরা-১ আসনে মাওলানা ইজ্জত উল্লাহকে, সাতক্ষীরা-২ আসনে আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে মুফতি রবিউল আশার এবং ৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন জামায়াতের পক্ষ থেকে পদপ্রার্থী।

পরে বিএনপির দেনদরবার জোরালো হলে শুধু সাতক্ষীরা-১ আসনে ছাড় দিতে সম্মত হয় দলটি। বিএনপির নেতারা জানান, মনোনয়ন চূড়ান্তের একেবারে শেষ মুহূর্তে বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মির্জা ফখরুল ইসলামের অনুরোধে সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপি নেতা ডা. শহীদুল আলমকে ছাড় দিতে রাজি হয়। বর্তমানে সাতক্ষীরা-২ ও ৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামায়াত লড়াই করছে। দুই প্রার্থীই এখন কারাগারে।

সাতক্ষীরা জেলার ৪টি আসন ঘুরে গতকাল দেখা গেছে, একই রকম হতাশার চিত্র। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, বিএনপি যদি সব আসনে প্রার্থী দিত, তা হলে এখন আমেজটা থাকত উৎসবের। যুদ্ধাপরাধীদের তকমা থাকত না এ জেলায়। নিঃসঙ্গ হয়ে প্রার্থী মাঠে থাকলেও হয়তো কারাগারে থাকতে হতো না বা শেষ মুহূর্তে এমন এলোমেলো পরিবেশ সৃষ্টি হতো না।

এদিকে নাম প্রকাশ করা যাবে না, এমন শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, এখানে আমরা জামায়াতকে বয়কট করলে আওয়ামী লীগ যে তাদের বুকে টেনে নিত না, তার গ্যারান্টি কে দেবে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে এলডিপি আছে। সাতক্ষীরা-৪ আসনে এলডিপি প্রার্থী এরই মধ্যে জামায়াতপ্রীতি শুরু করেছেন। তিনিও ধরে নিয়েছেন প্রার্থিতা হারাবে ধানের শীষের চাদরে মোড়া জামায়াত প্রার্থীরা।

ভোটের স্বার্থে অভয় দিচ্ছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের জামায়াতী ভোটারদের। বলছেন, মহাজোটে আছি আপনাদের বুক দিয়ে সামলাব। তবে এ নিয়ে জানতে চাইলে কুলা প্রতীকের প্রার্থী রেজা ‘পরে কথা হবে’ বলে এড়িয়ে যান। এ আসনে আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগই।

সূত্র: আমাদের সময়